দিন যায় জলের মতন। পৃথিবীর কি গতি খুব বেড়ে গেছে? নিমেষে শেষ করে দিচ্ছে দশক? আমরা দলে দলে উদ্ভ্রান্ত এলোমেলো ছুটছি কিন্তু সত্যিকারের স্বাধীন দশক ধরতে পারছি না। স্বাধীনতা মানে কি ইংরেজ থেকে আজাদি? আজকাল শকুনেরা আকাশ থেকে খোঁজে না শিকার। টিকটিকি দেওয়ালে নেই, মাটিতে। জানে ক্ষুধার্ত পতঙ্গ পড়বেই মাটিতে। আমরা দেশবাসী প্রাণীরা মুক্ত নই। আমাদের ঘিলুতে বাস বহু ভার্চুয়াল শকুন। আমাদেরই দেশ ভাই। আমরা কিভাবে আঘাত হানবো? কারার কপাট বন্দি আমাদের দায়বদ্ধতা। অন্যের দুর্ভোগ স্বাধীনতাহীনতা অসহায়তা এড়িয়ে যেতে বাধ্য হই অন্তরীন ভয়ে। দুর্বোধ্য কবিতা লিখে পেয়ে যাই প্রচুর লাইক। মাটিতে পা নেই। নেই সংবেদনশীলতা। ভাষা দূষণের হাওয়ায় উড়ছি। বিবর্তনের দায়বদ্ধতা ভুলেছি।
আমরা যদি স্পর্শকাতর হতাম তবে বুঝতে পারতাম সত্তর দশক থেকে কেউ কেউ কাব্য রচনায় আমাদের আঁতে ঘা দিয়ে এই কথাটা বার বার বলে গেছেন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। তিনি ধরে রেখেছেন তাঁর ব্যক্ত ক্যানভাসে উড়তি শকুন ঝাঁকের অতি আচার। পরপর দশকের ভাবী শোষন দেখে তাঁর উদ্বেল কষ্ট হাহাকার ব্যঙ্গ হয়ে কলম থেকে বেরিয়েছে, 'আমার সন্তান যাক প্রত্যহ নরকে/ছিঁড়ুক সর্বাঙ্গ তার ভাড়াটে জল্লাদ/উপড়ে নিক চক্ষু, জিহ্বা দিবা দ্বিপ্রহরে /নিশাচর শ্বাপদেরা, করুক আহ্লাদ/তার শৃঙ্খলিত হাত পা নিয়ে /শকুনেরা।...'
ঠিক তারপরই তাঁর ও আমাদের সবার অসহায় ধিক্কার,... 'কতটুকু এসে যায় তাতে/আমার, যে আমি করি প্রত্যহ প্রার্থনা /'তোমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে'
সত্তর দশক ছিল চরম অস্থিরতার সময়। সেই সময়কার দ্রোহ রাজনৈতিক অস্ত্রাঘাতে খুন হয়েছিলো একথা আমরা জোর করে ভুলে থাকি। কিন্তু এই কবিতাটার পরের পংক্তি পড়লে আবার সেই রক্তাক্ত দিনগুলো ছবির মতো ভেসে ওঠে। '... আমার বিবেক লজ্জা, যে আমি বাংলার/নেতা কবি সাংবাদিক, রাত গভীর হলে /গোপনে নিজের সন্তানের ছিন্ন শির/ভেট দিই দিল্লিকে, গঙ্গাজলে হাত ধুয়ে /ভোরবেলা বুক চাপড়ে কেঁদে উঠি"হায় /আত্মঘাতী শিশুগুলি রক্তে আছে শুয়ে "।
তাঁর মৃত্যুর তিন দশক কেটে গেছে। শোষকের বাগীচা এখন অত্যাধুনিক ম্যানেজমেন্ট কুশলী। কিন্তু তিনি ছিলেন ভবিষ্যত দ্রষ্টা। এই কবিতার শেষ পংক্তিতে সেই সময়ে লিখে গেছেন, '... প্রত্যেক কাগজে আমি লিখবো ফুলের /ভেতর পোকার নিন্দা...'। মনে হয় প্রত্যহ তাঁর কবিতাগুলি পড়া উচিৎ।
No comments:
Post a Comment