রামকিঙ্কর
বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
মাটিই আসল
তারপর এক চিলতে আকাশ
সমস্ত ঘর এক মায়াবী নির্জনতা
সেখানে যখন জ্যোৎস্নার চাঁদ উঁকি মারে
মনে হয় মানুষ কথা বলছে।
তাঁর মাথার ওপর
একটা আগুনের হারিকেন লন্ঠন
একসময় অস্থির হয়ে ওঠে
চাঁদের সঙ্গে সে কথা বলে
"মাটি চাই, আরও মাটি...."
নিজের গড়া মূর্তি
সে তখন নিজের হাতে ভেঙে ফেলে।
কখন রাত গড়িয়ে দুপুর আসে
তখন সে ঘর ছেড়ে মাঠে
তাঁর মনে থাকে না
মাথার ওপর, মাথার
ভিতরে
একটা ক্রুদ্ধ সূর্য গর্জন করছে ;
মনে থাকে না,
সে ক্ষুধার্ত ! মদ ছাড়া কিছুই তার পেটে পড়ে
নি.....
#
রামকিঙ্কর।কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় লিখিত
এই কবিতাটি বরাবরের প্রিয় আমার।এই কবিতাটি পাঠ করতে গেলেই আমি পরিষ্কার দেখতে পাই
অদ্ভূত এক নির্জনতা জড়িয়ে গুরুপল্লির দিকে হেঁটে যাচ্ছেন আমাদের রামকিঙ্কর বেইজ।সেই
নির্জনতা থেকে কিভাবে বুঝি হন্তারক বাতাস এসেই জড়িয়ে ধরে একজন শিল্পীকে।একজন
আত্মগত উচ্চারণের দার্শনিককে।
রামকিঙ্কর বেইজ।এক বিষ্ময়কর প্রতিভা।এক
আবহমানতা।একজন প্রখর মেধার লাঙল ছুঁয়ে থাকা দাউদাউ হাহাকারের আগুনে পুড়তে থাকা
মানুষ।
কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় আমাদের
দেখাচ্ছেন_
‘চাঁদের সঙ্গে সে কথা বলে
"মাটি চাই, আরও মাটি...."
নিজের গড়া মূর্তি
সে তখন নিজের হাতে ভেঙে ফেলে’।
রামকিঙ্কর ছিলেন সেই ঘরানার যিনি চাঁদের
সঙ্গে কথা বলেন আর বারংবার ভেঙ্গে ফেলতে থাকেন নিজেরই গড়া মূর্তি।
জীবনের কোথাও কি জায়মানতা থাকে!খাদের কিনারে
দাঁড়িয়েও একজন শিল্পী নিজেকেই অনন্ত এক খননের দিকে নিয়ে যেতে থাকেন।তিনি তার
আত্মগত হয়ে উঠবার পরিসরে সাজিয়ে দিতে থাকেন জীবনের সাদা ও কালো সব
ম্যাজিকগুলিকেই।যেমন কবি লিখলেন_
‘সমস্ত ঘর এক মায়াবী নির্জনতা
সেখানে যখন জ্যোৎস্নার চাঁদ উঁকি মারে
মনে হয় মানুষ কথা বলছে’।
একজন শিল্পীকে তৈলচিত্রের ভেতর ঢুকে পড়তে
দেখি আমরা।চিরকালীন এক ঘোরের মধ্যে লিপ্ত হয়ে হতে শিল্পী রামকিঙ্কর তার সমস্ত
জীবনের গল্পে নুতনভাবে টেনে আনতে থাকেন একটা ‘আগুনের হ্যারিকেন লন্ঠণ’।একজন জাত
শিল্পীর যাপনটাই তো এখানে কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় অবিশাশ্ব সততায় বিছিয়ে
রেখেছেন।এখানেই এই কবিতাটির মুখ্য ফোকাস।
রামকিঙ্কর জানতেন_
‘মাটিই আসল
তারপর এক চিলতে আকাশ’
আর-
‘সমস্ত ঘর এক মায়াবী নির্জনতা’
এই কবিতার পরতে পরতে এক তীব্র মায়া।সুতীব্র
ম্যাজিক।
দারুণ একটা কবিতা আপনি আলোচনার জন্য নির্বাচন করেছেন। আপনার গদ্যের একটা সিগনেচার আছে, তা যারা চেনে তাদের কাছে আপনার এই কবিতাটির আলোচনা কৌতুহল ও প্রত্যাশা জাগাবেই। আপনি প্রত্যাশা রেখেছেন। খুব উপভোগ্য আলোচনা।
ReplyDelete