Wednesday, August 28, 2019

রুমা তপাদার: জীবনঘনিষ্ঠ কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়






সাহিত্য সমাজসাপেক্ষ। তাই কথাসাহিত্য হোক আর কাব্যসাহিত্য, সর্বদাই সেই দেশের তৎকালীন আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলের প্রতিচ্ছবিকে বর্ণনা করবেই। কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কবিতায় প্রগাঢ় সমাজবোধ শ্রেণি - শোষণ, রক্তাক্ত সমাজের জ্বলজ্যান্ত চিত্র ফুটে উঠেছে।  এই সচেতনতার রসেই তাঁর কাব্য সমৃদ্ধ ও প্রাণবন্ত।

    চল্লিশের দশক বাংলা কবিতার সর্বাপেক্ষা আলোড়িত কাল পরিসর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, মন্বন্ত
  , দেশ বিভাজন, স্বাধীনতা আন্দোলন ও ঘোষণা সব মিলিয়ে সমাজিক পরিস্থিতিই  কাব্যভাবনায়  অন্য মাত্রা এনে দিল। এই কাল পরিসরের অন্যতম কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।           
   
    তাঁর 'একটি পচা ফল' কবিতায়  তিনি যে দিকচিহ্নকারী ভাবনা নিয়ে এসেছেন সেই মরুময় সমাজের সঙ্গে আজও আমরা একই ভাবে পরিচিত। 

                                      'একটি পচা ফলের জন্য
 ভিক্ষুকেরা সবাই হাত বাড়ায়,
       আমাকে দাও, আমাকে দাও আমাকে
     যেন আগুন লেগেছে ওই পাড়ায়।'

    বলাবাহুল্য যে পাড়ার কথা এখানে বলা হল তা পাড়া ছাড়িয়ে গ্রাম ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে উপস্থিত হয়েছে। এইসব কবিতায় সর্বোতভাবেই যুগ ও জীবন যুক্ত। সামাজিক অরাজকতা প্রতিবাদ ও  রোমান্টিকতা তার কবিতার মুল সুর। সাহিত্য আন্দোলনের ঝড়-ঝঞ্ঝাক্ষুব্ধ পরিবেশে তার কবিতা আয়নার মতো। ‘ আমাকে দাও আমাকে দাও ‘ -----এই হাত বাড়ানোর প্রবনতার আজও কোনো পরিবর্তন হয়নি। আজও আগুন লেগেই আছে। শুধু আগুনই না ; রক্ত পর্যন্ত  ওই যে 'খুনোখুনি'       

       সমকালীন জীবনযাত্রা, সাধারণ মানুষের সমস্যা, দাবি-দাওয়া, অপ্রাপ্তি  থেকে উঠে এসেছে----
"ফলটি ছুঁড়ে দিতেই বাঁধলো দাঙ্গা
ভিক্ষুকদের খুনোখুনি থামায় কে"

    এই 'খুনোখুনি' তো আজও সমানে চলে আসছে। আজও আগুন দাউদাউ।  প্রাপ্তির আশায় --'আমাকে দাও আমাকে দাও',এই  চিৎকার দাউ দাউ জ্বলে ওঠার কারণ হয়ে ওঠে। 

          কবিতো সময়ের কাছে সহজাত ভাবেই দায়বদ্ধ। 'শিরদাঁড়ার তফাতে’ সেই দায় কেউ স্বীকার করেন কেউ করেন না। যারা করেন না তাদের লেখাতেও সময় পরিস্থিতির ছবি ভেসে ওঠে। বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তো সচেতন ভাবেই সময়ের রুপকার। প্রতিবাদী কবি তিনি। শঙখ ঘোষ তাঁকে  বলেছেন, "বাংলার সবচেয়ে প্রতিবাদী কবি"
     কবিতায় প্রতিবাদ হলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কবিতা শ্লোগান হয়ে ওঠে। কাব্য-সৌন্দর্য হারায়। কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কবিতায় তীব্রতর প্রতিবাদ ভাষা পেলেও বিশুদ্ধ আবেগ শাণিত হয়ে কাব্য-সৌন্দর্যে ভরপুর। শব্দ ব্যবহারে তিনি অকুন্ঠ। তাঁর কবিতা জীবনঘনিষ্ঠ। ব্যক্তিমানসের চৈতন্যজাত অনুভব থেকেই এসেছে পঙক্তি গুলি।
    স্ব্দেশ প্রীতির আপোষহীন অঙ্গীকারের এক আমোঘ জীবন শপথ তাঁর কবিতা। কালি কলম নয় রক্ত দিয়ে তিনি কবিতা লিখেছেন। 'একটি পচা ফল ' এই প্রতীকী ব্যাঞ্জনা ভাবতেই অবাক লাগে। মগ্ন সাধক ছাড়া এতো পরিপূর্ণ অনুকবিতা রচনা করা অসম্ভব। কবিতাটি আজও একইভাবে প্রাসঙ্গিক। পোশাকি কবিতার উর্দ্ধে তাঁর ভাবনা তাই তো এইসব ঘন অন্ধকার আগুনের চিত্র আলোর মতো পরিচ্ছন্ন আমাদের কাছে।                    





No comments:

Post a Comment

একঝলকে

সম্পাদকীয়-র পরিবর্তে

সে চেয়েছিলো একটি সত্যিকারের প্রেমের কবিতা লিখতে। তার তো একটাই জীবন। মানুষের জীবনে প্রেমের চেয়ে নির্মল পিপাসার জল আর কী থাকতে পারে? ...

পাঠকের পছন্দ