Wednesday, August 28, 2019

তৃষ্ণা বসাক-এর কবিতা








হাওয়াবন্দুক ও অন্যান্য প্রকল্প


দেখা

মরাইয়ে একটু ধান জমলেই আমি
তাতে আগুন লাগিয়ে আসি।
আমারই মরাই, আমারই ধান –
কিন্তু ভবিষ্যতের জন্যে এত খাদ্য জমানো আমার সহ্য হয় না।

পাড়া

পাড়াটার কোথায় শুরু কোথায় শেষ, কিছু বোঝা যাচ্ছে না।
হয়তো বাড়ির মধ্যেই আপিস, ক্ষুদ্র ঋণ, কবিতা-ভাতা,
আকাশ দেখার বিশেষ পাঠক্রম,
হয়তো বাড়ির গিন্নিদের জন্যে মিড-ডে মিল চালু হয়েছে,
আর পাড়ার বেকার ছেলেরা বৌদিদের পেট ভরে খাওয়াবে বলে
কোমর বেঁধে খিচুড়ি রাঁধছে,
রাস্তার ধারে ঘাসের জঙ্গলে অগুন্তি হলুদ, ছোট্ট ছোট্ট হলুদ ফুল
আর গুচ্ছ গুচ্ছ প্রকল্প-
গোলাপি তিনতলা বাড়ির পেছনে গানের ক্লাস
আর সামনে অঝোর ধারায় জল পড়ে যাচ্ছে,
সাদা জল গড়িয়ে গড়িয়ে রাস্তা পেরিয়ে
উল্টোদিকের পুকুরে গিয়ে পড়ছে।
পুকুর ধারে একটা মস্ত শালগাছের তলায়
বনমালীদার বাড়ি,
শালফুল সারাদিন ঝুরঝুর করে পড়ছে বাড়ির চালে, তার মধ্যে বনমালীদার বৌ যে কতবার ছুটে ছুটে একবার জল, একবার কেরোসিন একবার মেয়ের টিউশন ক্লাসে ছুটছে,
এ পাড়াটায় সব কিছু আছে,
কিন্তু কোথায়, কতটা হাঁটলে কোন জায়গায় পৌঁছনো যায় কেউ জানে না
তবু সবাই চলে, চলতেই থাকে
দুধের ডিপো থেকে, দাঁতের রুট ক্যানাল থেরাপি
আর্সেনিক মুক্ত কল থেকে সুবর্ণজয়ন্তী-
অথচ এসবের মধ্যে একদম স্থির হয়ে বসে আছে বনমালীদা!
চলন্ত পাড়াটা তার বুকে টানেল ফুঁড়ে যাচ্ছে আসছে,
সারাদিন অবিশ্রান্ত শালফুল ঝুরঝুর করে ঝরে পড়ছে তার মাথায়,
বনমালীদা চুপটি করে বসে আছে, বসেই আছে।





জীবন

বেড়ালের মতো বসে আছে,
থাবার ওপর থাবা, অলস ভঙ্গিতে,
আমি একবার উঠে গেলে
ছোঁ মারবে মাছের পেটিটি
রেয়াত করবে না,
ও তো জানে মাছই জীবন।


পর্দা

এদিকটা ভেতরমহল, ওদিকটা বাইরের ঘর
মাঝখানে একটা পর্দা টাঙ্গানো,
নীল ক্যাম্বিসের পর্দা, রঙচটা,  জ্যালজেলে,
চোখ রাখলে ছায়া ছায়া কারা  ওপারে হেঁটে চলে বেড়াচ্ছে দেখা যায়।

গেরস্তপোশাকি

জিরে গুঁড়ো ফুরিয়েছে, প্যাকেট থেকে বার করে কৌটোয় ঢালি,
একে একে আবিস্কার করি
হলুদ, নুন, ধনে গুঁড়ো এগুলোও শেষের মুখে,
প্যাকেট থেকে বার করে কৌটোয় ঢালি
ক্রমে ক্রমে দেখি সরষে, পোস্ত, কালো জিরে, সাদা জিরে
সবাই একে একে ফুরিয়ে এসেছে,
আমি কোন দিকে না তাকিয়ে,
এমনকি প্রথম কদম কীভাবে থেঁতলিয়ে রাস্তায় পড়ে আছে-
তাও উপেক্ষা করে প্যাকেট কাটি আর ঢালি, ঢেলে চলি।
ঢালতে ঢালতে কখন  আমিই ফুরিয়ে এসেছি –
সেটা বুঝেও না বোঝার ভান করে
জিরে ধনে হলুদ কৌটোয় ভরে চলি,
আসলে আমার কোন নতুন প্যাকেট কেনা হয়নি,
কিংবা ঢেলে  রাখবার মতো কোন কৌটা ধুয়ে মুছে রাখিনি এখনও!




অশনি সঙ্কেত

দলীয় পতাকাগুলো মেঘের নিচে কেমন বিবর্ণ হয়ে আছে,
মেঘ এত নিচু হয়ে নেমেছে, মনে হচ্ছে ওদের তুলে নেবে,
কদমফুলের গন্ধে ওরা ভয়ে সিঁটিয়ে যাচ্ছে,
বকুল ওদের কান ছুঁয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে,
কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছে না বর্ষা আসছে কিনা,
ফিসফিসানি শোনা যাচ্ছে এটা নাকি নিম্নচাপ,
সেসব উপেক্ষা করে মেঘ,
যৌথ স্মৃতির মতো গাঢ়,
হাতির বাচ্চার মতো নাছোড় মেঘ
নেমে আসছে, আসছেই।

প্রেম

এই রাস্তা কাজিডাঙ্গা হয়ে পেয়ারাবাগান বাঁয়ে রেখে
যতদূর গেছে, আমরা তার বেশি দূর চলে গেছি,
চলে যাই, চলে যাই
যতদূর আদৃশ্য জীবন,
যতদূর তুমি আছ, গুঁড়ো গুঁড়ো সোনা,
তোমার স্নানের জল তুলে রাখি,
ক্যাস্পিয়ান সাগরের নীল জল
ওপরে মুকুটের মতো সাদা ফেনা-
ছুঁয়ে থাকো আ-গ্রহ জীবন
আমি স্নান ঢালি, ঢেলে যাই।

তুচ্ছ দু কদম


এই বৃত্তের বাইরে সহজিয়া গান আছে, তুমি শুনবে কি?
ওই যে ডুলুং নদী বালি মেখে জ্যোৎস্না মেখে পড়ে আছে-
ওর বুকে বেশি জল নেই, তবু সে ভাসাতে পারে যে কোন রমণে,
ভাসানোও কলা এক, যে রমণী জানে, সেই জানে,
তার পাশ ফেরা মুখও তোমায় স্খলিত করতে পারে দুপুরের ঘ্রাণে
তাকে তুমি উপেক্ষা কোরোনা,
এই জীবনের বাইরে অন্যতর খেলা আছে, হাওয়াবন্দুকের,
তিন পাত্তি, জোড়া মেয়ে, রাক্ষুসে শালগম-
ট্রিগার টেপার আগে হেঁটে এসো তুচ্ছ দু কদম।


No comments:

Post a Comment

একঝলকে

সম্পাদকীয়-র পরিবর্তে

সে চেয়েছিলো একটি সত্যিকারের প্রেমের কবিতা লিখতে। তার তো একটাই জীবন। মানুষের জীবনে প্রেমের চেয়ে নির্মল পিপাসার জল আর কী থাকতে পারে? ...

পাঠকের পছন্দ